এক নজরে জামিয়া
ঐতিহাসিক দারুল উলূম বরুড়া
হক-বাতিল ও সত্য-মিথ্যার সংঘাত চিরন্তন। হক ও সত্যের জয় নিশ্চিত। বাতিল ও মিথ্যার পতন নির্ঘাত। মানব রচিত ধর্ম ও মতবাদ সবই ভ্রান্ত ও বাতিল। কেবল সত্য আল্লাহপ্রদত্ত ধর্ম ইসলাম। আল্লাহ তাআলা চিরসত্য ও কল্যাণের পথে বিশ্ব মানবতার আহ্বানের জন্য অগণিত নবী-রাসুল প্রেরণ করেন। এর পরিসমাপ্তি ঘটান হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রেরণ করে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তেকালের পর দীন হেফাযতের মহান দায়িত্ব অর্পিত হয় আলিম সমাজের ওপর। নবীজীর ভাষায় যারা তাঁর উত্তরাধিকারী ও ভবিষ্যত কর্ণধার। হকের দিশারি যে বিশাল কাফেলা তিলে তিলে তাদের অর্পিত দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট ছিলেন তাঁদেরই একজন কুতুবে আলম কারি ইবরাহিম রহ.। তাঁর প্রত্যক্ষ দিক নির্দেশনায়-ই প্রতিষ্ঠা লাভ করে দারুল উলূম বরুড়া।
বরুড়ার সাথে কারি সাহেব রহ.-এর সম্পর্ক
কারি ইবরাহিম রহ. নোয়াখালীর দৌলতপুরে জন্মলাভ করেন। পরবর্তীতে হিজরত করে চাঁদপুর জেলার কচুয়ায় উজানী গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। তৎকালে জায়গাজমি সংক্রান্ত ব্যাপারে এতদঞ্চলে পারদর্শী ছিলেন জনাব বখ্শ আলী ভূঁইয়া। তিনি ছিলেন বরুড়া থানাধীন নরিন্দ গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান, প্রভাবশালী ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি।
উজানীর বাড়ি রেজিস্ট্রি সংক্রান্ত ব্যাপারে কারি ইবরাহিম রহ.-এর সাথে ভূঁইয়া সাহেবের পরিচয় হয়। এ পরিচয়েই মাদরাসা প্রতিষ্ঠার সূত্রপাত ঘটে। কারি সাহেব রহ.-এর তাকওয়া-তাহারাত, খোদাভীতি, বুুযুর্গি ও ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ কারি হওয়ার সংবাদ সাধারণ মানুষের নিকটও গোপন থাকেনি। হযরতের সুনাম, সুখ্যাতি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়লে লোকজন দলে দলে তাঁর সান্নিধ্যে আসতে থাকে। তিনি বিশুদ্ধ কুরআন শিক্ষা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিভিন্ন জায়গায় সফর করতেন। এর ধারাবাহিকতায় বরুড়া পাঠানপাড়ায় তাঁর আগমন ঘটে। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গও তাঁর কুরআন প্রশিক্ষণে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণের সমাপনী দিবসে তিনি শিরক-বিদআতের বিরুদ্ধে এক জ্বালাময়ী বক্তব্য রাখেন। ফলে বখশ আলী ভূঁইয়াসহ বরুড়ার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের অনেকেই হযরতের হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন।
এ সকল মুরিদই বরুড়ায় একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠার জন্য কারি সাহেব রহ.-কে বার বার অনুরোধ করতে থাকেন। ফলে স্বীয় খলিফা মাওলানা আফতাবুদ্দিন রহ.-কে বরুড়ায় দ্বীনি প্রতিষ্ঠান করার নির্দেশ প্রদান করেন। মাওলানা আফতাবুদ্দিন রহ. কারি সাহেব রহ.-এর নির্দেশে হযরতের মুরিদগণের সার্বিক সহযোগিতায় ১৩২৭ হিজরি মোতাবেক ১৯০৯ ঈসায়ি, ১৩১৬ বাংলায় বরুড়া উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে ‘ইসলামিয়া মাদরাসা বরুড়া’ নামে একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। মাদরাসাটি উত্তরোত্তর ধর্মীয় শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তরে উন্নীত হয়ে ‘আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলূম বরুড়া’ নামে সর্বত্র পরিচিতি লাভ করে।